উবার
স্মার্টফোনের অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি সেবার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন উবার ২০১৬ সালে ২২ নভেম্বর বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে, দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটে উবারের রাইড-শেয়ারিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে। উবারের নিবন্ধ প্রক্রিয়াও ঝামেলা-মুক্ত। এ জন্য আপনাকে প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে উবার অ্যাপটি ডাউনলোড এবং আপনার নাম, মোবাইল নম্বর ও ইমেল আইডি দিয়ে সাইন আপ করতে হবে।
নিবন্ধন করা শেষে আপনার মোবাইলে পাঠানো যাচাইকরণ কোড ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন। উবারের মাধ্যমে যাতায়াত করার জন্য আপনাকে পিকআপ পয়েন্ট ও গন্তব্য অবস্থান উভয়ই দিতে হবে। তারপরে অ্যাপটিতে থাকা সিস্টেম আপনাকে ভ্রমণের আনুমানিক ভাড়া দেখাবে। নিশ্চিত হওয়ার পরে, আপনি নিকটতম উবার চালকের কাছ থেকে কল পাবেন। তিনি আপনার সঠিক পিকআপ অবস্থান জেনে সেখান থেকে আপনাকে গাড়িতে তুলে নেবে এবং গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেবেন।
উবার অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য অনুরোধ পাঠানোর সময় গাড়ি, মাইক্রোবাস, মোটরবাইক বা স্কুটারের মধ্য থেকে আপনার পছন্দের যানটি বেছে নিতে পারবেন। আর কী চান? এছাড়া ‘প্রমো কোডের’ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় রাইডের ওপর ছাড় দিয়ে থাকে উবার।
পাঠাও
২০১৫ সালের মে মাসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘পাঠাও’ দেশের প্রথম রাইড শেয়ারিং কোম্পানি হিসেবে সরকারের তালিকাভুক্ত হয়। তিন স্বপ্নদর্শী যুবক ফাহিম সালেহ, সিফাত আদনান এবং হুসেন ইলিয়াস প্রতিষ্ঠিত ট্রেন্ড-সেটার স্টার্টআপটির প্রধান অফিস রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত।
পাঠাও বর্তমানে দেশের তিনটি বড় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে রাইড শেয়ারিং সেবা দিচ্ছে। সারা দেশে পাঠাওয়ের ২০ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত যানবাহন আছে। রাইড শেয়ারিং সেবার পাশাপাশি কুরিয়ার সার্ভিস, খাবার বিতরণ, ই-বাণিজ্য সেবাও দিয়ে যাচ্ছে পাঠাও।
পাঠাও অ্যাপ ব্যবহার করে যাত্রীরা মোটরসাইকেল বা গাড়ি ভাড়া করেত পারবেন। এ অন-ডিমান্ড রাইড শেয়ারিং সেবা পেতে যাত্রী এবং চালক উভয়েরই জিপিএস প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি আইওএস/অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন লাগবে। পাঠাও প্ল্যাটফর্মটি জিপিএস লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীকে নিকটতম পাঠাও চালকের সাথে সংযোগ করে দেয় যিনি যাত্রীকে তার গন্তব্যে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক।
এ সেবা পেতে গুগল প্লে স্টোর থেকে আপনি সহজেই পাঠাও অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন। তারপর আপনি পিকআপ ও গন্তব্যস্থল নির্ধারণ করে আনুমানিক ভাড়া যাচাই করে নিতে পারেন। যাত্রা নিশ্চিত করলে আপনি পিক-অ্যান্ড-ড্রপের জন্য চালকের ফোন পাবেন।
এমইউভি
রাজধানী ঢাকা শহরে ২০১৬ সালে রাইড শেয়ারিং সেবা শুরু করে এমইউভি। ঢাকার পরিবহন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এ অন-ডিমান্ড রাইড শেয়ারিং সেবাটি চালু করা হয়। গুগল প্লে স্টোর থেকে এমইউভি অ্যাপটি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করে যাত্রীরা তাদের নিকটবর্তী এমইউভি বাইকারদের নিজ নিজ পিকআপ এবং গন্তব্যস্থল ঠিক করে অনুরোধ পাঠাতে পারবেন।
মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অন-ডিমান্ড সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক কোম্পানি জেপি টেকনোলজিস লিমিটেড মোবাইল সফটওয়্যার ভিত্তিক এ মোটরবাইক সেবা কার্যক্রম চালু করে। এমইউভি অন-ডিমান্ড খাবার বিতরণ এবং কুরিয়ার সেবাও দিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা শহরের মধ্যে সম্ভাব্য সবচেয়ে কম খরচে রাইড সেবা দেয় এমইউভি। কোনো রাইডের জন্য প্রথমে ৪৯ টাকা থেকে গণনা শুরু করে এমইউভি। পরের প্রতি কিমি ভাড়া নেমে আসে ১২ টাকায়। এ সিস্টেমটি প্রতি মিনিটে মাত্র ০.৪৯ টাকা চার্জ করে। প্রথমের মূল ভাড়ার সাথে দূরত্ব খরচ যোগ করে ভাড়া নিধারণ করা হয়। সেই সাথে, বিভিন্ন সময় যাত্রীরা কুপন ব্যবহার করে ভাড়ার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ছাড় পেতে পারেন।
এসএএম
দেশের আরও একটি অনলাইন মোটরবাইক রাইড-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হলো এসএএম (শেয়ার-এ-মোটরসাইকেল)। যাত্রীরা এসএএম মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এ সেবা উপভোগ করতে পারবেন। এ অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এবং পরে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য কাস্টমাইজ করা হয়েছে। অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে আপনি এমন একজন চালক খুঁজে পাবেন যিনি আপনার গন্তব্যের দিকেই যাচ্ছেন।
এ অন-ডিমান্ড অনলাইন সেবাটি দেশের বিভিন্ন শহরের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। শহর ও তার আশপাশে যাতায়াতের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের মাধ্যম হিসেবে এসএএম-এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এসএএম ২০২০ সালে ‘পিংক এসএএম’ নামে দেশের প্রথম নারী চালিত রাইড-শেয়ারিং সেবা চালু করে যা নারীদের জন্য এক সাহসী উদ্যোগ বলা চলে।
আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে সহজেই এসএএম অ্যাপটি ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে পারেন। পরে আপনার পিক-অ্যান্ড-ড্রপ পয়েন্টগুলো বাছাই করে যাত্রার জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারেন। অ্যাপের সিস্টেম আপনার সাথে নিকটতম চালকের যোগাযোগ করিয়ে দিবে। সেইসাথে এসএএম প্রো আপনাকে পছন্দসই মোটরবাইক পেতে সাহায্য করবে।
এসএএম সেবায় আপনি ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে ভাড়া দিতে পারবেন। চলমান পরিস্থিতিতে যা আপনাকে কাগুজে টাকা বিনিময়কালে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে মুক্তি দিতে পারে।
সহজ রাইড
দেশে ২০১৪ সাল থেকে অনলাইনে টিকিট সেবা প্রদানের জন্য কাজ শুরু করে সহজ। প্রতি বছর বিশেষত ধর্মীয় উৎসবের সময় ঘরমুখো যাত্রীদের টিকিটের জন্য অবর্ণনীয় সমস্যা পোহাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সময় ও পরিশ্রম উভয়ই সাশ্রয়ের জন্য সহজের সৃজনশীল সেবাটি বাংলাদেশের গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তারা যাত্রীদের জন্য সেবা বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনও চালু করেছে।
অন্যান্য মোটরবাইক রাইডিং সেবার মতো, সহজ রাইড অ্যাপে যাত্রীরা তাদের নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য বাইক-রাইড নিতে পারেন। তাদের রাইড শেয়ারিং সেবার মাধ্যমে আপনি কোথাও যেতে চাইলে আপনার স্মার্টফোনে ‘সহজ’ অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। তারপর আপনার পিকআপ এবং গন্তব্যস্থল ঠিক করে অনুরোধ পাঠান। গন্তব্যে পৌঁছে আপনি হয় নগদ বা বিকাশ ওয়ালেটের মাধ্যমে ভাড়া দিতে পারবেন। প্রতিটি যাত্রায় যাত্রীদের আশ্চর্য রকম ছাড় দিয়ে থাকে সহজ।
অন্যান্য রাইড শেয়ারিং অ্যাপ
এখন পর্যন্ত আমরা দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় অন-ডিমান্ড রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো নিয়ে কথা বলেছি। এ প্ল্যাটফর্মগুলো ছাড়াও ট্যাক্সিওয়ালা, গতি, চলো, ওভাই, আমারবাইক, যাবো, গাড়িভাড়া, আসোযাই, যাত্রী, পার্লক্যাব, পিকমিসহ আরও কিছু রাইড শেয়ারিং সেবা রয়েছে।
নারীদের জন্য রাইড শেয়ারিং
পিংক স্যাম, ওবোন ও লিলির মতো নারীবান্ধব রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র নারী যাত্রীরা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবেন।
স্টার্টআপগুলো দেশের মানুষের জন্য ভালো মানের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাপগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি গাড়ি, মোটরবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, আপনার যদি গাড়ি বা মোটরসাইকেল থাকে তবে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন আপনিও।